বাংলাদেশের ভালবাসা দিবস
১৯৯৩ সালের দিকে বাংলাদেশে
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের আর্বিভাব ঘটে। যায়
যায় দিন পত্রিকার সম্পাদক
শফিক রেহমান। তিনি
পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে।
পাশ্চাত্যের ছোঁয়া নিয়ে দেশে
এসে লন্ডনী সংস্কৃতির প্র্যাকটিস
শুরু করেন। তিনি
প্রথম যায় যায় দিন
পত্রিকার মাধ্যমে বিশ্ব ভালবাসা দিবস
বাংলাদেশীদের কাছে তুলে ধরেন। তেজগাঁওয়ে
তার পত্রিকা অফিসে কেউ চাকরী
নিতে গেলে
সাথে তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে
যেতে হতো। প্রেমের
যুগললবন্দী কপোত-কপোতীকে দেখে
ওনি খুব
খুশী হতেন।
এজন্য শফিক রেহমানকে বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের জনক বলা হয়। এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস।
এ ইতিহাসটির বয়স সতের শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই। দুই শত উন সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারির কথা। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, কারা রক্ষীর অন্ধ মেয়ের প্রেমে পরেন । এ অপরাধে সম্রাট ক্লডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করেন।
তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নাম করণ করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’। বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। আর যায় কোথায় ! লুফে নেয় বাংলার তরুণ-তরুণীরা। এরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি চলছে।
মানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিলনা। আজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাব। তাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন। বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপা-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে।
শুধুই কি তাই ! অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য।
ইসলাম কী বলে এই ভালবাসা নিয়ে ??
‘ভালবাসা’ এক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ হতে আমরা পেয়েছি। ভালবাসা’ শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ তা‘আলা
সকল ইতিবাচক কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا
تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ
الْمُحْسِنِينَ
‘‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের
মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুহসিনদের ভালবাসেন।’’(সূরা
আল-বাকারা:১৯৫)
ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা অবলম্বন করা এ দুটিই
ইতিবাচক কর্ম। তাই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালবাসেন।
আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাওবাকারী ও
পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।’’(সূরা আল-বাকারা:২২২)
তাকওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে খুবই
ভালবাসেন।
তিনি বলেন,
فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِين
‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে
ভালবাসেন।’’(সূরা আল ইমরান:৭৬)
পবিত্র এ ভালবাসার সাথে অপবিত্র ও নেতিবাচক কোন কিছুর সংমিশ্রণ
হলে তা আর ভালবাসা থাকে না, পবিত্রও থাকে না; বরং তা হয়ে যায় ছলনা,শঠতা ও
স্বার্থপরতা।
ভালবাসা, হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা এক
অদৃশ্য সুতোর টান। কোন দিন কাউকে না দেখেও যে ভালবাসা হয়; এবং ভালবাসার গভীর টানে
রূহের গতির এক দিনের দূরত্ব পেরিয়েও যে দুই মুমিনের সাক্ষাত হতে পারে তা ইবন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার এক বর্ণনা থেকে আমরা পাই।
তিনি বলেন,
النعم تكفر والرحم تقطع ولم نر مثل تقارب القلوب
‘‘কত নি‘আমতের না-শুকরি করা হয়, কত
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়, কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মত (শক্তিশালী) কোন
কিছু আমি কখনো দেখি নি।’’(ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ :হাদীস নং২৬২)
No comments:
Post a Comment